আসুন, আদম(আঃ) এর জন্মস্থান নিয়ে একটু ব্রেইনস্টর্মিং করি:
সুরা বাকারা আয়াত ৩৬:
فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيْطَـٰنُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۭ ۖ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّۭ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍۢ ٣٦
অর্থ:
অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও
লাভ সংগ্রহ করতে হবে।
এই আয়াতে আরবি ٱهۡبِطُواْ এর বাংলা করা হয়েছে পদস্খলিত করা/ নেমে যাওয়া। শুধুমাত্র এই আয়াত টা পড়লে যে কেউ মনে করবে আদম হাওয়া (আঃ), ইবলিশকে আকাশে থাকা জান্নাত থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।এখন সুরা বাকারা ৬১ নাম্বার আয়াত দেখি:
وَإِذْ قُلْتُمْ يَـٰمُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍۢ وَٰحِدٍۢ فَٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلْأَرْضُ مِنۢ بَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ ٱلَّذِى هُوَ أَدْنَىٰ بِٱلَّذِى هُوَ خَيْرٌ ۚ ٱهْبِطُوا۟ مِصْرًۭا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ وَٱلْمَسْكَنَةُ وَبَآءُو بِغَضَبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ٦١
আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য–দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।
এই আয়াতে ٱهۡبِطُواْ শব্দ টার মানে করা হয়েছে উপনিত হওয়া। সোজা বাংলায় বলতে গেলে ইহবিতু শব্দ দিয়ে মুসা আঃ ও তার কওমকে আল্লাহ এক শহরে প্রবেশ/যেতে বলেছে। আগের আয়াতেও এই শব্দের এটাই অর্থ হয়। যদি আপনি ইহবিতু দিয়ে নেমে যাওয়া বুঝান, সেটা কিন্তু এই আয়াতে খাটে না। অথচ ইহবিতুর অর্থ এক নিকটবর্তী কোনো স্থানে যাওয়া/ প্রবেশ করা হলে দুই আয়াতেই অর্থ মিলে যায়। ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আদম, হাওয়া আঃ কে জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে বলল। এখন এই জান্নাত মানে আল্লাহ কিয়ামতের পর যে জান্নাতে মুসলিম দের রাখবেন সেটা নয়।
জান্নাতের অবস্থান নিয়ে আল্লাহ বলেছেন,
۞ وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا ٱلسَّمَـٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ١٣٣
অর্থ:
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীনের সমান, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।
এখানে খেয়াল করুন, জান্নাতের সীমানা আসমান ও জমিনের সমান। দুইটা বস্তুর আয়তন যদি সমান হয়, একটা আরেকটার মধ্যে থাকতে পারে না। তাই জান্নাত অবশ্যই এই মহাবিশ্বের বাইরে আরেকটা মহাবিশ্ব। আর এই জান্নাত আদম আঃ ও দেখেনি। কারণ আল্লাহ বলেন,
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌۭ مَّآ أُخْفِىَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍۢ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٧
অর্থ: অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।
এই আয়াত দিয়ে বুঝা যায়, জান্নাত কোনো মানুষ দেখেনি।
তাহলে আদম আঃ কে যেখানে তৈরি করা হয়েছিল সেটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজের ফল স্বরূপ যে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে সেই জান্নাত নয়। বরং আগের দুইটা আয়াত ব্রেইনস্টর্মিং করলে বুঝা যায় সেটা পৃথিবীতেই।