নুহ আঃ এর বন্যার যতগুলো বর্ণনা পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবথেকে পুরনো ভার্সন টা হলো সুমেরীয় ট্যাবলেটে পাওয়া epic of Gilgamesh. ১২ টা মাটির ট্যাবলেটে লেখা এই এপিক অব গিলগামেশ খুঁজে পাওয়া গেছে ইরাকের নিনেভা অঞ্চলে। এই ১২ টা ট্যাবলেটের মধ্যে বর্ণিত গল্পের মধ্যে কিছু গ্যাপ আছে এবং এই গ্যাপের তথ্যগুলো মেসোপটেমিয়া ও আনাতলিয়ার অন্যস্থানে পাওয়া গেছে।
সুমেরীয় ট্যাবলেট অনুযায়ী গিলগামেশ ছিল একজন সেমি ডিভাইন রাজা যার বাবা ছিলেন উরুকের(প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন উরুকের নাম পরিবর্তন করে ইরাক রাখে) রাজা লুগালবান্দা। তার মা ছিলেন দেবতা আনুর কন্যা নিনসুন। ট্যাবলেট গুলো অনুযায়ী, গিলগামেশ ৭৫% ডিভাইন এবং ২৫% মানুষ। গত অধ্যায়ে বলেছিলাম নেফেলিম হলো ফলেন এঞ্জেল ও মানব কন্যার ক্রসব্রিড। কিন্তু গিলগামেশ ছিল দেবী ও মানুষের ক্রসব্রিড। তাই কোনো স্কলার গিলগামেশ কে নেফেলিম বলে আখ্যায়িত করেনি।
এপিক অব গিলগামেশ শুরু হয় গিলগামেশের প্রশংসা করার মাধ্যমে। গিলগামেশ ছিল একজন বিখ্যাত যোদ্ধা, জ্ঞানী, এবং একজন গ্রেট বিল্ডার। কিন্তু রাজা হবার পর গিলগামেশ খুব অহংকারী ছিল এবং রাজ্য পরিচালনায় কোনো নমনীয়তা ছিল না। এটা থেকে গিলগামেশ কে ন্যায়পরায়ণতার পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দেবতা আনু একটা ক্লোন তৈরী করে, যার নাম এন্কিডু। যে কিনা বনে থাকত এবং আনুর নির্দেশনা অনুযায়ী এন্কিডু উরুকের শহরের দিকে যেতে থাকে। এদিকে দেবতা আনুর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে গিলগামেশ কে এক বুনো মানুষের সাথে শক্তির পরীক্ষা দিতে হবে। তাই গিলগামেশ এন্কিডুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
দ্বিতীয় ট্যাবলেট অনুযায়ী, গিলগামেশ ও এন্কিডুর মধ্যে এক শক্তির পরীক্ষা হয় এবং গিলগামেশ জয়ী হয়। কিন্তু তারা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। এরপর তারা বিভিন্ন এক্সপেডিশনে যায়। এসব এক্সপেডিশন থেকে উরুকে ফিরে আসলে দেবী ইশতার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু সে এটা উপেক্ষা করে। এতে ইশতার রেগে গিয়ে তাকে হত্যা করার জন্য এক হেভেনলি ষাড় পাঠায়। গিলগামেশ এন্কিডুর সাহায্য নিয়ে এই ষাঁড়কে হত্যা করে।
সাত নাম্বার ট্যাবলেটে বলা হয় এক স্বপ্নে গিলগামেশ দেখতে পায় যে দেবতা আনু, ইয়া এবং আমুন শামাশ সিদ্ধান্ত নেয় যে ঐ ষাঁড়কে হত্যা করার অপরাধে এন্কিডুকে মেরে ফেলা হবে। এরপর এন্কিডু অসুস্থ হয়ে পড়ে ও মারা যায়। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে গিলগামেশ একদম ভেঙ্গে পড়ে এবং তখন তার নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা হয়।
এরপর সে উতনাপিশতিম নামের একজনের সন্ধানে বের হয় যে কি না ব্যাবিলনীয় মহা প্লাবন থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ( যেহেতু উতনাপিশতিম নৌকা বানায় এবং সব প্রাণী ও গাছপালা রক্ষা করে তাই তাকে নুহ আঃ/নোআ এর ইকুইভ্যালেন্ট বলা হয়ে থাকে)। তাকে খুঁজে পাওয়ার পর গিলগামেশ নিজের জীবনের ভয় তার কাছে প্রকাশ করে।
এসময় উতনাপিশতিম গিলগামেশ কে তার মহা প্লাবন থেকে বেঁচে যাওয়ার বিস্তারিত বর্ণনা করে যেটা epic of Utnapishtim এ লেখা আছে এবং এক গাছের সন্ধান দেয় যেটা খেলে গিলগামেশ অমরত্ব লাভ করতে পারবে। গিলগামেশ তখন সেই গাছের সন্ধানে বের হয় এবং এস পর্যায়ে খুঁজে পায়। কিন্তু একটা সার্পেন্ট কোনোভাবেই তাকে সেই গাছ নিতে দেয় না।
বারংবার ব্যর্থ হওয়ার পর গিলগামেশ উরুকে ফিরে আসে, ফিরে আসার পথে গিলগামেশের সাথে থাকা ইশতারের দুইটা উপহার হারিয়ে যায়। তখন সে উপলব্ধি করে, কোনোভাবেই মানব জীবনে অমরত্ব পাওয়া সম্ভব না। তবে জীবনে সৎকাজ করলে ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে তার রাজ্য পরিচালনা করলে সে মানুষের মনে হাজার বছর বেঁচে থাকবে। এভাবে সে ন্যায়পরায়ণতার সাথে তার বাকি জীবন পার করে দেয়। বারো নাম্বার ট্যাবলেটে এন্কিডুর স্পিরিট ফিরে আসে এবং সে গিলগামেশ কে তার হারিয়ে যাওয়া দুইটা উপহার ( খুব সম্ভব একটা বাদ্যযন্ত্র) ফিরে পেতে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাহিনী বর্ণনা করে।