ওসমানী খেলাফতের একজন এডমিরাল ছিল, নাম আহমেদ মুহিউদ্দীন পিরি। উনি সেসময় পিরি রিস নামেই পরিচিত ছিলেন। তুর্কি ভাষায় রিস অর্থ ক্যাপ্টেন। উনি একাধারে একজন এডমিরাল, ন্যাভিগেটর, কার্টোগ্রাফার ছিলেন। ১৫১৩ সালে পিরি রিস কতগুলো খন্ডিত ম্যাপ একত্র করে একটা ওয়ার্ল্ড ম্যাপ তৈরি করেন।
বিশ্বে যতগুলো প্রাচীন ওয়ার্ল্ড ম্যাপ আছে এগুলোর মধ্যে পিরি রিস এর ম্যাপটা আমি একটু বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
পিরি রিস যে ম্যাপটা সংকলন করে সেখানে আমেরিকার কিছু অংশ, আটলান্টিক মহাসাগরের বেশ কিছু অংশ, আফ্রিকার অংশ বিশেষ এবং ইউরোপের পশ্চিম সমুদ্রসীমা, দক্ষিণ আমেরিকার কোস্ট লাইন এমনভাবে অঙ্কিত হয়েছে যেগুলো বর্তমান দিনের ম্যাপগুলোর সাথে হুবহু মিলে যায়। আরো যেটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো যে পিরি রিস ম্যাপে এন্টার্কটিকার ম্যাপ আছে। অথচ এন্টার্কটিকা আবিষ্কার হয়েছে ১৮২০ সালে।
তাহলে পিরি রিস এন্টার্কটিকার সন্ধান পেল কিভাবে? পিরি রিস যে সোর্স ম্যাচগুলো থেকে তার ম্যাপ কমপাইল করেছিল সেগুলোর বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে পিরি রিস তার ম্যাপেই নোটস লিখে রাখেন সে কোন কোন ম্যাপ থেকে তথ্য নিয়েছে। পিরি রিস তার ম্যাপের জন্য কলম্বাসের ম্যাপ থেকে, তৎকালীন আরবদের থেকে, স্প্যানিশদের থেকে, পর্তুগিজদের থেকে বিভিন্ন ম্যাপ নিয়ে তার ম্যাপটি বানিয়েছিল।
তবে যে তথ্যগুলো সাধারণত কোথাও পাবেন না সেটা হলো স্প্যানিশ ও পর্তুগিজরা তাদের ম্যাপগুলো নিয়েছিল এজটেকদের কাছ থেকে মায়ানদের কাছ থেকে। দক্ষিন আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতা গুলো অনেক মিস্টেরিয়াস। আমরা মায়া সভ্যতা, এজটেকদের সম্পর্কে জানলেও এদের থেকেও আরো মিস্টেরিয়াস সভ্যতা ছিল, যেগুলো সম্পর্কে হাজার ঘাটলেও খুব একটা তথ্য বের হয়ে আসে না। যেমন, অলমেক সভ্যতার নাম শোনা যায় অল্প পরিসরে। অথচ এই অলমেক শব্দটা মায়ান শব্দ। তারা নিজেদের কি নামে ডাকতো এটা কেউ বলতে পারে না।
আমরা মিশরীয় পিরামিড ও তাদের সভ্যতা সম্পর্কে হাজার হাজার তথ্য জানতে পারি, কিন্তু মায়ানরাও মিশরীয়দের কম উন্নত ছিল না। মায়ান পিরামিড গুলো মিশরীয় পিরামিডের থেকেও জটিল ভাবে বানানো। এগুলো পৃথিবীর কল্পিত সব রেখা যেমন মকর ক্রান্তি, কর্কট ক্রান্তি এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। মায়ানদের কসমোপলিটন ইতিহাস ছিল কি না জানা যায়নি তবে এটুকু উপলব্ধি করা যায় যে মায়া সহ দক্ষিন আমেরিকার অনেক সভ্যতা বিশ্ব ভ্রমন করেছে ও সারা বিশ্ব থেকে জ্ঞান আহরণ করে একত্র করে রেখেছে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজরা এদের সেসব জ্ঞানের লিখিত ভার্সন নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে এটা অভিয়াস বিষয়।
পিরি রিস ম্যাপে যে এন্টার্কটিকার উল্লেখ আছে এটা প্রমাণ করে যে পিরি রিস যেসব সোর্স ম্যাপ থেকে এন্টার্কটিকার খোঁজ পেয়েছে সেই ম্যাপগুলো যারা বানিয়েছে তারা খুব ভালোভাবেই জানত সেই মহাদেশ সম্পর্কে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো পিরি রিস ম্যাপে এন্টার্কটিকার বেশ কিছু অঞ্চল বরফের নিচে না, অর্থাৎ সবুজের সমারোহ। এটা কিভাবে সম্ভব? আমি মনে করে, পিরি রিসের সোর্স ম্যাপ গুলো এতটাই পুরনো যে সেগুলো যখন বানানো হয়েছিল তখন এন্টার্কটিকা সবুজে ঘেরা এক মহাদেশ ছিল। আমি বেশ কিছুদিন আগে পৃথিবীর প্রিসেশন সম্পর্কে লিখেছিলাম যে প্রিসেশন গতির কারণে পৃথিবীর ভৌগলিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। যেখানে এখন সমুদ্র, সেখানে ভবিষ্যতে হয়ত মরুভূমি হয়ে যাবে।
এই বিষয়গুলো পরোক্ষভাবে আরো একটা বিষয় ক্লিয়ার করে যে আমরা ইতিহাস বলতে যেটা বুঝি সেটা আসলে হেভিলি ডক্টরড। এটা মানতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে।
পৃথিবী থেকে যতগুলো প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস গত হয়েছে তারা প্রত্যেকেই তাদের সভ্যতার পরিপক্কতার শীর্ষে পৌঁছে তারপর ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। এটাই অর্ডার অব ন্যাচার। এটা এখানে আর বিস্তারিত লিখতে পারব না। আমার জার্নালে বাকিটুকু লেখা আছে। তবে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেসব বিষয়ে রিসার্চ করছি, সুদূর ভবিষ্যতেও করে যাব এবং সেসব তথ্য খুঁজে বের করব যেগুলো এখনো পর্যন্ত গোপন আছে।
বর্তমানে এমন একটা সময় অতিবাহিত হচ্ছে যেখানে একটু নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেই সত্য উদঘাটন সম্ভব।