কোরআনে সেবার রাণী বিলকুইস/বিলকিসের ব্যাপারে সুরা নামলে ২২ থেকে ৪৪ আয়াতে বর্ণনা করা আছে যে সে কিভাবে প্রাথমিকভাবে সুর্য পূজারী সাবিয়ানদের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরে সোলাইমান আঃ এর মাধ্যমে একেশ্বরবাদে ফিরে আসে। ইসলামিক ট্রেডিশন থেকে জানা যায় রাণী বিলকিসের প্যারেন্টেজ ছিল জীন ও মানুষের ক্রস।
সেবার রাণী বিলকিসের ব্যাপারে একাধিক নন ইসলামিক সোর্সের বই ও স্কলারলি আর্টিকেল আছে। বইগুলোর নাম লেখার শেষে দিয়ে দেব।
সুরা বাকারার ৬২ নাম্বার আয়াতে যে সাবিয়ানদের উল্লেখ আছে সেই সাবিয়ানদের এলাকা সেবার রাণী ছিল বিলকিস। সেবা নামে বর্তমান ইয়েমেনে একটা গ্রাম আছে। কিন্তু বিলকিসের সেবা এলাকা ছিল আরো বিস্তর। অনেক স্কলারের মতে এটা ইথিওপিয়ার অনেক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।এর কারণ হলো, বর্তমান মিডল ইস্টের যে ম্যাপ, এটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের দ্বারা বানানো তাই ঐতিহাসিক কোনো বর্ডার তারা ঠিক রাখেনি। ইথিওপিয়ান ভাষায় লেখা কেব্রা নাগাস্ট( সেসময়ের রাজাদের বিবরণ) থেকে রাণী বিলকিসের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। ইথিওপিয়ায় রাণী বিলকিসকে রাণী মাকেদা বলা হতো। কেব্রা নাগাস্টকে ইথিওপিয়ায় খুব মর্যাদার সাথে দেখা হয় কারণ এখানে সোলাইমান আঃ এর সময় থেকে অনেক রাজাদের বর্ণনা আছে।
কয়েকটা পুরনো স্ক্রলের তথ্য অনুযায়ী সলোমনের আমন্ত্রণে জেরুজালেমে আসার পর রাণী মাকেদা সলোমনের দেওয়া একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সলোমনের কাছে থাকা বাদ্যযন্ত্রের সুরে রাণী মাকেদা মুগ্ধ হয়ে যায়।সলোমন ও রাণী মাকেদা ঘটনাক্রমে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। এদের দুইজনের একটা ছেলে সন্তান হয়। কেব্রা নাগাস্টের বর্ণনা মতে, এই ছেলের নাম মেনেলেক। এই ছেলে বড় হয় ইথিওপিয়ায়। এবং পরিনত বয়সে পৌঁছানোর পর সে জেরুজালেম যায়। সলোমন তাকে দেখে খুব খুশি হয়ে জেরুজালেমের রাজত্বের দায়ভার দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু মেনেলেক বলে সে সেবায় ফিরে যেতে চায়, তার মায়ের এলাকায়। সলোমন এতে রাজি হয় এবং তার সাথে জেরুজালেম থেকে সৈন্য পাঠায়। কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথে মেনেলেক সলোমনের কাছে থাকা আর্ক অব দ্যা কভেনেন্ট টা চুরি করে নিয়ে যায়, যেটাতে মুসা আঃ এর কাছে আসা টেন কমান্ডমেন্টস ছিল।
এখান থেকেই কেব্রা নাগাস্টের কাহিনী শুরু আর এখান থেকেই ইথিওপিয়া/ ইয়েমেন/ সেবা রাজ্যে জুডাইজম চর্চা শুরু হয় কারণ মেনেলেক জেরুজালেম থেকে জিউয়িশ ট্রেডিশন সাথে করে নিয়ে আসে। এজন্য ইথিওপিয়াকে বেটা ইজরায়েল/হোম অব ইজরায়েল/ নিউ জাইয়োন বলা হয়। সলোমনিক লিনিয়েজ ও আর্ক অব দ্যা কভেনেন্ট থাকার কারণে ইথিওপিয়ার ইহুদি কমিউনিটি ইথিওপিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সেই সময় থেকেই ইথিওপিয়ায় যতগুলো চার্চ বা মনাস্টেরি তৈরি হয়েছে, সবগুলোতেই একটা করে আর্ক অব দ্যা কভেনেন্টের রেপ্লিকা রাখা আছে। এই বস্তুটাকে ইথিওপিয়ায় এতটাই পবিত্রতা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় যে, কেউ এই রেপ্লিকা গুলোও ছুয়ে দেখার সাহস করে না।
ইথিওপিয়ায় মানুষ কত যত্ন সহকারে ধর্ম পালন করে সেটা তাদের না দেখলে বুঝা যায় না। ইথিওপিয়ান বেটা ইজরায়েলাইটরা জুডাইজমের কতগুলো বিশেষ দিক পালন করে থাকে যা জুডাইজম বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে হয় হারিয়ে গেছে বা আর কোনো কারণে পালন করা হয় না। তারা শুধুমাত্র তোরাহ ফলো করে, পরবর্তীতে বিভিন্ন ইহুদি রাবাইদের লেখা তালমুদ তারা কোনোভাবেই ধর্ম চর্চার উপকরণ হিসেবে মনে করে না। কোশার, খৎনার মতো ধর্মের রীতি গুলো তারা এখনো বজায় রেখেছে। অপরদিকে ইথিওপিয়ায় যারা খ্রিস্টান তারা বাইবেলের কোনো পরিবর্তন সাধন করেনি। যেমনঃ বর্তমানে সারা বিশ্বে সবথেকে পপুলার বাইবেল হলো কিং জেমস বাইবেল, যেখানে নিজেদের সুবিধার্থে ১৪ টা এপোক্রিফা বাইবেল থেকে বখদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স ক্রিস্টিয়ানদের কাছে যে বাইবেল টা আছে সেটা এখন পর্যন্ত পাওয়া সবথেকে পুরনো বাইবেল যেখানে কোনো এপোক্রিফা বখদ দেওয়া হয়নি। এই বাইবেল টা প্রায় ৮০০ বছর পুরনো।
আর্ক অব দ্যা কভেনেন্ট পরবর্তীতে ইতিহাস থেকে বিলীন হয়ে যায়। এর পিছনে বেশ কয়েকটা কারণ আছে বলে জানা যায়। যেমনঃ এটি জেরুজালেমের টেম্পল অব সলোমনে রাখা ছিল কিন্তু ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনিয়ানরা যখন জেরুজালেম আক্রমণ করে তখন এটিকে সুরক্ষার জন্য চিরদিনের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়।
আবার কেব্রা নাগাস্টের বর্ণনা অনুযায়ী মেনেলেক আর্ক টাকে ইথিওপিয়ায় নিয়ে আসার পর আকসুম শহরে চার্চ অব আওয়ার মেরি অব জাইয়নে লুকিয়ে রেখেছে।
সোলাইমান আঃ এর সময়ে মানুষ, জীন উভয়েই প্রচুর পরিমান জাদুবিদ্যা চর্চা করেছে যেগুলো আবার বই আকারে লিখেও রেখেছে। যেগুলো সম্পর্কে কোরানে বলা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও সেবার রাণী বিলকিস, মুসা আঃ এর টেন কমান্ডমেন্টস, আর্ক অব দ্যা কভেনেন্ট সম্পর্কে কোরানে হিন্টস দেওয়া আছে এবং এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ার মতো যথেষ্ট রিসোর্স ইন্টারনেটেই এভেইলেভল আছে। এই টপিকের উপর যতগুলো বই পড়েছি তার কয়েকটাঃ