ছোটবেলা থেকেই খুব অল্প পরিসরে আমাদের পড়ানো হয় পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি সম্পর্কে। এই দুইটার মতো আরো একটা বিষয় আছে যেটা খুব একটা পপুলার টপিক না। সেটা হলো প্রিসেশন অব দ্যা আর্থ।
পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরছে আবার সূর্যের চারিদিকেও ঘুরছে। কিন্তু নিজ অক্ষের উপর পৃথিবী একটু হেলানো অবস্থায় ঘুরে। এটাকে প্রিসেশন অব দ্যা ইকুনক্সেসও বলে। ইকুইনক্স হলো বছরের দুইটা দিন যেদিন গুলোতে দিনরাত সমান থাকে।
প্রতি ২৬০০০ বছর পরপর পৃথিবীর এই প্রিসেশন রেভোলুশন সম্পন্ন হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে আমার কাছে এই কারণে যে আমি এই প্রিসেশন এর সাথে পৃথিবীর বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ডট মেলাতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রিহেশনের কারণে পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যেটা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদি। দীর্ঘ মেয়াদি হিসাবে এই প্রিসেশন পৃথিবীর জিও পলিটিক্সেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিভাবে রাখে সেটা বলি এবার।
মিশরের ওয়াদি হিতান( ভ্যালি অব দ্যা হোয়েল) মরূভূমির মধ্যে অবস্থিত একটা জায়গা যেখানে তিমি সহ বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর কঙ্কাল এখনো দৃশ্যমান। বর্তমান মিশরের প্রায় ৯৪% ই ফাকা। মিশরের ম্যাপ দেখলে বুঝবেন নীলনদের অববাহিকায় শুধু মানুষের বসবাস। কিন্তু কয়েক হাজার বছর আগে মিশর ছিল সবুজের সমারোহ। মিশরের স্স্ফিংসের গায়ে যে ইরোশন মার্ক আছে সেটা গবেষণা করে দেখা গেছে এটা শুধুমাত্র অতিবৃষ্টির কারণে হওয়া সম্ভব। অর্থাৎ অতীতের কোনো একটা পয়েন্টে মিশরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হতো যেটা কিনা গ্রানাইট পাথর ক্ষয় করে ফেলেছে। অথচ গ্রানাইট পাথর হলো স্টিলের থেকেও শক্ত।
মিশরের এই ওয়াদি হিতান এলাকা একসময় সমূহের তলদেশে ছিল। আপনি যদি eye of Sahara লিখে গুগল করেন দেখবেন সাহারা মরুভূমির মাঝখানে যেখানে যাযাবর ছাড়া কারোর বসবাস সম্ভব নয়, সেখানে কমপ্লেক্স কিছু আর্কিটেকচারাল ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এই ধরনের ধ্বংসাবশেষ গুলো একটা জিনিস ই প্রমাণ করে যে বর্তমানে পৃথিবীতে এমনো বসবাসের অযোগ্য জায়গা আছে যেখানে একসময় মানুষের বসবাসের উপযোগী ছিল।
অন দ্যা টপিক অব ইকুইনক্স, মিশরের যে প্রধান তিনটা পিরামিড, এগুলো নিয়ে আপনাকে যদি প্রশ্ন করি যে পিরামিড কয়টা তল বিশিষ্ট? আপনি বলবেন যে পিরামিডের চারটা তল। এটাই আপাত দৃষ্টিতে সঠিক উত্তর। কিন্তু যে দুইদিন পৃথিবীর দিন রাত সমান থাকে( ডেইজ অব ইকুইনক্স) এই দুইদিন শুধুমাত্র দেখা যায় পিরামিড গুলোর তল আসলে আটটা। এইটা থেকে আমি বুঝেছি যে মিশরীয়দের এমন নলেজ ছিল এস্ট্রনমি নিয়ে যে তারা গানিতিকভাবে বের করে স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে মাত্র দুইটা দিন আলো থাকে অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিন্ন। তারা এমনভাবে পিরামিড বানিয়েছে যে শুধুমাত্র এই দুই ইকুইনক্স দিনেই বোঝা যাবে পিরামিডের তলা আসলে আটটা।
পৃথিবীর এই প্রিসেশন গতির কারণে মানুষের বসতি এলাকা ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং মানুষ তখন নতুন জায়গায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হয়। এই মেগা মাইগ্রেশনের কারণে মানব সভ্যতার জিওপলিটিক্সে পরিবর্তন আসে।
তবে, বর্তমান মানুষের মধ্যেও কোনো একটা আদি লিনিয়েজ টিকে আছে যারা এখনো এই প্রিসেশন সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে এবং পৃথিবীর জিওপলিটিক্সে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা কারা এটা নিয়ে আমি হয়তো কখনো স্পেসিফিক ভাবে গবেষণা করব না কারণ সেটা আমার কাছে এখনো অতটা গুরুত্বপূর্ণ না। তবে ব্রডলি স্পিকিং, জার্মানির যে ঈগল প্রতীক, এটার উৎপত্তি মিশর। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির প্রায় সবগুলো স্থাপনা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অনুকরণে বানানো। পবিত্র কোরআনে মুসা আঃ আর তার সমসাময়িক এক ফেরাউনের কাহিনী যতবার বর্ণিত, অন্যান্য সব নবীদের কাহিনী ততবার বর্ণিত হয়ত। এদের প্রেক্ষাপট ছিল মিশর। সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ মিশর পৃথিবীর প্রিসেশন গতির কারণে আজ ধু ধু মরূভূমি।
আরো অনেক কিছু লেখার ছিল কিন্তু বেশি বড় করে লিখলে পাঠকের বিরক্তির কারণ হব, যেটা আমার কাম্য নয়। তবে একটা আমার একটা ইন্টারেস্টিং হাইপোথেসিস দিয়ে শেষ করি।
পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহের প্রিসেশন গতি প্রায় সমান। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে প্রতি বছর প্রায় ০.৬ সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে। একসময় মঙ্গল গ্রহ বর্তমান পৃথিবীর জায়গায় ছিল। পৃথিবী একদিন মঙ্গল গ্রহের জায়গা দখল করবে। তখন হয়ত শুক্র গ্রহ পৃথিবীর জায়গায় আসবে। এইসকল বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলো এটাও ইঙ্গিত করে যে একসময় মঙ্গল গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণের উপস্থিতি ছিল। এটা নিয়ে আরেকদিন লিখব কারোর পর্যাপ্ত ইন্টারেস্ট থাকলে।